এই বিষয়টি হইতেই উচ্চতর সাহিত্যের সঙ্গে লোক-সাহিত্যের সম্পর্কের প্রশ্নটিও আসিয়া যায়। উদ্ধৃত অংশে দেখিতে পাওয়া যাইবে যে লোক-কথা (folk-tale ) কে ‘humble sisters of written art’ বলা হইয়াছে ইহা হইতেই বুঝিতে পারা যাইবে, ইহাদের সম্পর্ক সহোদরের সম্পর্ক, অর্থাৎ ইহারা পরস্পর স্বাধীন নহে, বরং এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ লোক-সাহিত্যের প্রকাশ সংক্ষিপ্ত কিন্তু উচ্চতর সাহিত্যের প্রকাশ বিস্তৃততর; লোক-সাহিত্য আত্ম-নির্লিপ্ত হইয়া লেখক বা সমাজ রচনা করে, শিল্প কিংবা ভাব-বিষয়ে আত্ম-সচেতন হইয়া লেখক উচ্চতর সাহিত্য রচনা করেন। শিল্প কিংবা ভাব-বিষয়ে যেই মুহুর্তে লেখকের আত্ম-সচেতনতা (self-consciousness) দেখা দেয়, সেই মুহূর্তেই ইহা লোক-সাহিত্যের গণ্ডি অতিক্রম করিয়া উচ্চতর সাহিত্যের গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ভারতচন্দ্রই সর্বপ্রথম সচেতন শিল্পী; সেইজন্য তাঁহার রচনায় উচ্চতর সাহিত্যের উপকরণ যত বেশি, তাহার পূর্ববর্তী অন্য কাহারও রচনায় তাহা তত বেশি নাই। ভারতচন্দ্রের সঙ্গে তাহার পূর্ববর্তী কবিদিগের পার্থক্য সহজেই অনুভব করিতে পারা যায়।
প্রত্যেক দেশেই লোক-সাহিত্য উচ্চতর সাহিত্যের ভিত্তিরূপেই ব্যবহৃত হইয়াছে; কারণেইহার মধ্যে ‘the seed of all the future developments' অর্থাৎ ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বীজ নিহিত থাকে; কিন্তু এই বিষয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস একটু স্বতন্ত্র। বাংলার আধুনিক সাহিত্যের সঙ্গে ইহার প্রাচীনতর সাহিত্যের যোগ নাই। ইহার কারণ, বাংলার আধুনিক সাহিত্য পাশ্চাত্য সাহিত্যের ভাবাদশের উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে, ইহার জাতীয় সাহিত্যের ভাবাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করে নাই। ইউরোপের জাতীয় জীবনে যে রেঁনেস বা নব জাগরণের উদ্ভব হুইয়াছিল, তাহা ইউরোপের জাতীয় ভাবধারার উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল ; কিন্তু খৃষ্টীয় উনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী জীবনে যে রেঁনেস বা নব জাগরণ দেখা দিয়াছিল, তাহার প্রেরণা ইউরোপ হইতে আসিয়াছে, এদেশের ভাব-চৈতন্যের সঙ্গে তাহার কোন যোগ নাই। সেইজন্য আধুনিক বাংলার সঙ্গে বাঙ্গালীর জাতীয় চৈতন্যের যোগ বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। সুতরাং বাংলার লোক-সাহিত্য আধুনিক বাংলার উচ্চতর সাহিত্যের ভিত্তি হইতে পারে নাই। যদি তাহা হইতে পারিত, তবে আধুনিক সাহিত্যের উপর বাংলা লোক-সাহিত্যের প্রভাব অধিকতর অনুভূত হইত।
প্রত্যেক সভ্য জাতির মধ্যেই সাহিত্য-সংস্কৃতির দুইটি ধারা আছে—একটি লৌকিক ও আর একটি শিক্ষাগত (learned)। একথা সত্য নহে যে, দুইটি ধারা স্বাধীন ভাবে সমান্তরাল হইয়া প্রবাহিত হয়; কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যাহা হয়, তাহা ইহার বিপরীত—লৌকিক ও শিক্ষাগত ধারা দুইটি অনেক সময় পরস্পর মিশ্রিত হইয়া যায় এবং ইহাদের মধ্যে আদান-প্রদান চলিতে থাকে— ‘folklore materials being absorbed by poets and artists,’ - A. H. Krsppe, SDFML, p. 404. কিন্তু আধুনিক বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে ইহা সম্পূর্ণ সম্ভব হয় নাই ; কারণ, ইহার শিক্ষাগত (literary) ধারাটি এখানে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ভাবেই যে কেবল উদ্ভূত হইয়াছে, তাহা নহে—ইহার সঙ্গে লৌকিক ধারাটির অনেক বিষয়ে বিরোধও দেখা দিয়াছে। সেইজন্য বাংলায় লোক-সাহিত্য ও উচ্চতর সাহিত্যের মধ্যে এত বেশি ব্যবধান সৃষ্টি হইয়াছে।
তথাপি এ’কথা সত্য যে, এক কিংবা দেড় শতাব্দীর নাগরিক সভ্যতা লোক-সাহিত্যের প্রতি বাঙ্গালীর আকর্ষণ একেবারে লুপ্ত করিয়া দিতে পারে নাই। তাহার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য প্রমাণ, বিংশতি শতাব্দীর প্রথমার্ধেও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পূর্ব বাংলার লোক-সাহিত্যের ব্যাপক সন্ধান। ইহারই ফলে প্রভূত অর্থব্যয়ে পূর্ববঙ্গ হইতে মৈমনসিংহ গীতিকা,’ ‘পূর্ববঙ্গ-গীতিকা ও উত্তর বঙ্গ হইতে ‘গোপীচাঁদের সন্ন্যাস', ‘মাণিকচন্দ্র রাজার গান প্রভৃতি বিশ্বতপ্রায় লোক-সাহিত্যের পুনরুদ্ধার হইয়াছে। কারণ, যে জাতি সংহত পল্লী-জীবনের মধ্যে পুরুষানুক্রমিক বাস করিয়া একটি স্বপরিণত লোক-সংস্কৃতির জন্মদান করিয়াছে, আকস্মিক ভাবে তাহার উপর একটি বৈদেশিক সভ্যতা চাপিয়া ৰসিলেও, তাহা তাহার অন্তরের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করিয়া দিতে পারে নাই । সেইজন্য আমরা যতই আধুনিকতার মোহগ্ৰস্ত হই না কেন, এখনও আমাদের বিশ্বতপ্রায় পল্লীর পরিচিত একটি গানের সুর শুনিতে পাইলে মনের মধ্যে ষে সাড়া অনুভব করি, তাহার সঙ্গে আর কাহারও তুলনা দেওয়া যাইতে পারে না। অতএব আমরা মথুরাপুরীতে বাস করিয়াও পরিত্যক্ত পল্লী-বৃন্দাবনের জন্য বেদনা অনুভব করিতেছি। সেই বৃন্দাবনের সঙ্গে আমাদের যতটুকু পরিচয় আছে, ততটুকুই আমাদের সাধনার মধ্য দিয়া এখনও ফুটাইয়া তুলিতে চাই। কেবল কি আমাদের দেশেই ইহার পরিচয় পাই? ইহা মানব মাত্রেরই একটি সহজাত প্রবৃত্তি। যাহাদের নাগরিক সভ্যতা আমাদের অপেক্ষাও প্রাচীন, তাহাদের মধ্যেও এই ভাবের কোনও ব্যতিক্রম দেখিতে পাওয়া যায় না। আজ সমগ্র ইউরোপ ও আমেরিকা ব্যাপিয়া লোক-সাহিত্যের যে এত ব্যাপক অনুশীলন দেখা যাইতেছে, তাহার মূলেও সেই পরিত্যক্ত পল্লী-বৃন্দাবনের জন্য বেদনা-বোধই বর্তমান রহিয়াছে।
কিন্তু নাগরিক সমাজের মধ্যে লোক-সাহিত্যের প্রতি যে অনুরাগ দেখা দিয়াছে, তাহা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হইবার জন্য ইহাতে কিছু কিছু কৃত্রিমতাও প্রবেশ করিতেছে। সংহত সমাজ-জীবনের মধ্য হইতে নির্বাসিত হইবার ফলে নাগরিক সমাজের সমষ্টি বা সমাজ সম্পর্কে কোনও দায়িত্ব আর নাই। লোক-সাহিত্যের ক্রমবিকাশ একটি বিশিষ্ট ধারার ভিতর দিয়াই সম্ভব হইয়া আসিয়াছে, সেই ধারাটির সঙ্গে পল্লীর সমাজ পরিচিত ছিল—এমন কি এক হিসাবে বলিতে পারা যায় যে, সেই ধারাটি পল্লীর সংহত সমাজ-জীবনের মধ্যেই নিহিত ছিল ; কিন্তু তাহার সঙ্গে নাগরিক সমাজের পরিচিত হইবার কথা নহে। তাহার ফলে লোক-সাহিত্য কোন কোন ক্ষেত্রে একটি নাগরিক রূপ লাভ করিতেছে; বলা বাহুল্য, ইহার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ইহা কৃত্রিম বলিয়া বোধ হইতেছে। যাঁহারা লোকসাহিত্যের আলোচনা করিয়া থাকেন, তাহারাও অনেক সময় কৃত্রিম লোকসাহিত্য সৃষ্টি করিবার জন্য দায়ী। একজন ইংরেজ সমালোচক এই সম্পর্কে বলিয়াছিলেন “Folklorists whose business it is to study folklore frequently become infected and find that instead of studying folklore they are in fact making it.” -- R, D. Jameson, ibid, p. 400 বাংলাদেশেও কোন কোন পল্লী-সাহিত্যের সংগ্রাহক পল্লীকৰি এবং শিশুসাহিত্য সংগ্রাহক শিশুসাহিত্য রচয়িতা হিসাবে খ্যাতি লাভ করিয়াছেন। কিন্তু জাতির লোক-সাহিত্যের পক্ষে ইহা অপেক্ষা ক্ষতিকর আর কিছুই হইতে পারে না; কারণ, ইহা হইতে কালক্রমে জাতির যথার্থ সাংস্কৃতিক পরিচয় সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়। তবে যাহার মধ্যে জাতীয় রসানুভূতি খুব প্রবল, তিনি তাহার নিজস্ব লোকসাহিত্যের মধ্যে কোন কৃত্রিমতা থাকিলে, অতি সহজেই তাহা অনুভব করিতে পারেন ; কিন্তু পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার প্রভাব বশতঃ এদেশের শিক্ষিত জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় রসানুভূতি প্রায় বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে, সেইজন্য এই বিষয়ে অনেক কৃত্রিম বস্তু প্রকৃত রসানুসন্ধানকারীকেও বিভ্রান্ত করিতেছে।
আধুনিক বাংলা-সাহিত্যে কেবল রবীন্দ্রনাথই লোক-সাহিত্যের যথার্থ শক্তি উপলব্ধি করিতে পারিয়া ইহা তাহার কাব্য সাধনার কোন কোন দিক দিয়া অন্তর্নিবিষ্ট করিয়া লইয়াছিলেন। তিনি উচ্চতর সাহিত্যের সঙ্গে লোক-সাহিত্যের সম্পর্ক বিষয়ে যাহা উল্লেখ করিয়াছেন, তাহা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য । তিনি লিখিয়াছেন,
‘গাছের শিকড়ট যেমন মাটির সঙ্গে জড়িত এবং তাহার অগ্রভাগ আকাশের দিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছে তেমনই সর্বত্রই সাহিত্যের নিম্ন অংশ স্বদেশের মাটির মধ্যেই অনেক পরিমাণে জড়িত হইয়া ঢাকা থাকে—তাহা বিশেষরূপে—সংকীর্ণরূপে দেশীয় স্থানীয়। তাহা কেবল দেশের জনসাধারণেরই উপভোগ্য ও আয়ত্তিগম্য, সেখানে বাহিরের লোক প্রবেশের অধিকার পায় না। সাহিত্যের যে অংশ সার্বভৌমিক, তাহা এই প্রাদেশিক নিম্নস্তরের থাকটার উপর দাঁড়াইয়া অাছে। এইরূপ নিম্ন-সাহিত্য এবং উচ্চ-সাহিত্যের মধ্যে বরাবর ভিতরকার একটি যোগ আছে। যে অংশ আকাশের দিকে আছে, তাহার ফুল ফল ডাল পালার সঙ্গে মাটির নিচেকার শিকড়গুলার তুলনা হয় না—তবু তত্ববিদের কাছে তাহাদের সাদৃশ্য ও সম্বন্ধ কিছুতেই ঘুচিবার নহে।’
এই বিষয়টিই দৃষ্টান্ত দিয়া বুঝাইতে গিয়া তিনি উল্লেখ করিয়াছেন, নিচের সহিত উপরের এই যে যোগ, প্রাচীন বঙ্গসাহিত্য আলোচনা করিলে ইহা স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায় অন্নদামঙ্গল ও কবিকঙ্কণের কবি যদিচ রাজসভা ধনীসভার কবি; যদিচ তাঁহারা উভয়ে পন্ডিত সংস্কৃত কাব্য সাহিত্যে বিশারদ, তথাপি দেশীয় প্রচলিত সাহিত্যকে বেশি দূর ছাড়াইয়া যাইতে পারেন নাই। অন্নদামঙ্গলে ও কুমারসম্ভবের আখ্যানে প্রভেদ অল্প, কিন্তু অন্নদামঙ্গল কুমারসম্ভবের ছাঁচে গড়া হয় নাই। তাহার দেবদেবী বাংলাদেশের গ্রাম্য হর-গৌরী। কবিকঙ্কণ চণ্ডী, ধর্মমঙ্গল, মনসার ভাসান, সত্যপীরের কথা সমস্তই গ্রাম্য কাহিনী অবলম্বনে রচিত। সেই গ্রাম্য ছড়াগুলির পরিচয় পাইলে তবেই ভারতচন্দ্র, মুকুন্দরাম রচিত কাব্যের যথার্থ পরিচয় পাইবার পথ হয়। রাজসভার কাব্য ছন্দ মিল ও কাব্যকলা সুসম্পূর্ণ সন্দেহ নাই, কিন্তু গ্রাম্যছড়াগুলির সহিত তাহার মর্মগত প্রভেদ ছিল না।’ ( গ্রাম্যসাহিত্য )
উচ্চতর সাহিত্যের সঙ্গে লোক-সাহিত্যের সম্পর্ক বিষয়ে এমন যুক্তিযুক্ত কথা এ পর্যন্ত আর কেহ বলিতে পারেন নাই। রবীন্দ্রনাথের ইহা কেবল আত্মভাবপরায়ণ চিন্তার বিলাস মাত্র ছিল না, তিনি তাহার নিজের কাব্য সাধনার মধ্য দিয়া ইহা নানাভাবে প্রকাশ করিয়াছেন। যে যুগে তাহার ‘ছেলে ভুলানো ছড়া' কিংবা ‘গ্রাম্যসাহিত্য’ প্রবন্ধ রচিত হয়, তাহার পূর্ব হইতেই তিনি বাংলার লোক-সাহিত্যের প্রভাব নিজের সাধনার মধ্যে অনুভব করিতেছিলেন। তিনি ‘কড়ি ও কোমল’ রচনার যুগেই তাঁহার ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদী এল বান’ বাংলার এই ছড়াটি অবলম্বন করিয়া তাহার এই নামীয় প্রসিদ্ধ কবিতাটি রচনা করেন। ইহাতে প্রচলিত ছড়াটির মধ্যে তিনি রোমান্টিক চেতনা সঞ্চারিত করিয়া দিয়া ইহাকে আধুনিক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করিয়া লইয়াছেন। ইহার সুর, ছন্দ, ধ্বনি, এমন কি ভাষাও, লোক-সাহিত্যের; অথচ ইহার চেতনা আধুনিক। বাংলার লোক-সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত ছড়ার ছন্দটি রবীন্দ্রনাথই সর্বপ্রথম আধুনিক কাব্য রচনার একটি বিশিষ্ট ছন্দরূপে গ্রহণ করিয়া লোক-সাহিত্যের বহিরঙ্গের একটি বিশিষ্ট পরিচয়ের সঙ্গে আধুনিক সাহিত্যের যোগ রক্ষা করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথের এই ছড়ার ছন্দই পরবর্তী কালে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ কবিদিগকে ছড়ার ছন্দে কবিতা রচনা করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল।
‘মানসী’, ‘সোনার তরী’ ও ‘চিত্রা'র যুগেই প্রধানতঃ রবীন্দ্রনাথের লোকসাহিত্যে’র অন্তর্গত ছেলে ভুলানো ছড়া' ও 'গ্ৰাম্যসাহিত্য’ প্রবন্ধ দুইটি রচিত হয় এবং তৎসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ছড়ার সংগ্রহ প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের এই যুগের কাব্যসাধনার মধ্যে সেই জন্যই বাংলা লোক-সাহিত্যের প্রভাব অনেকখানি স্পষ্ট হইয়া উঠে। এই যুগে রচিত ‘বিম্ববতী’, ‘রাজার ছেলে ও রাজার মেয়ে’, ‘নিদ্রিতা’, ‘সুপ্তোত্থিতা’ প্রভৃতি কবিতার ভিতর দিয়া রবীন্দ্রনাথ বাংলার রূপকথার স্বপ্নজগৎকে তাহার অনুকরণীয় কাব্যভাষায় রূপ দিয়াছেন। এই সংস্কার যে তাহার জীবনে কোনদিন দূর হইয়া যায় নাই, তাহা তাহার পরবর্তী জীবনে রচিত ‘বীরপুরুষ প্রমুখ কবিতা এবং 'ছড়া’ প্রমুখ কাব্যগ্রন্থ রচনার ভিতর দিয়া তাহাই প্রকাশ পাইয়াছে। এই সকল কাব্যরচনায় কোন কোন স্থানে যেমন রূপকথার রস রোমান্টিক চেতনায় মিশ্রণ লাভ করিয়া আধুনিকধর্মী হইয়া উঠিয়াছে, তেমনই আবার কোন কোন ক্ষেত্রে লোক-সাহিত্যের রূপ বা ছন্দের মধ্য দিয়া আধুনিক কাব্যের ভাব প্রকাশ পাইয়াছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথই বাংলার লোক-সাহিত্যকে এই মর্যাদা দান করিয়াছেন। তাঁহাকে অনুসরণ করিয়া পরবর্তী কালে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ কয়েকজন কবি এই পথে অগ্রসর হইলেও তাহার কেবল বহিরঙ্গেই দৃষ্টি দিয়াছিলেন, রবীন্দ্রনাথের মত অন্তরঙ্গে এবং বহিরঙ্গে সামঞ্জস্য সৃষ্টি করিতে পারেন নাই। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের অগ্রগতির পথে ইহার উপর লোক-সাহিত্যের এই প্রভাব ক্রমেই ক্ষীণ হইয়া আসিতেছে।
লোক-সাহিত্যের সঙ্গে লিখিত সাহিত্যের পার্থক্য বিষয়ে আরও একটি কথা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, লিখিত সাহিত্য কালক্রমে যেমন প্রাচীন (classics) হইয়া যায়, লোক-সাহিত্য কদাচ তাহা হয় না। সাহিত্য লিখিত হইবা মাত্র তাহার রূপটি অপরিবর্তনীয় (rigid) হইয়া যায় বলিয়া কিছুকাল ব্যবধানেই ইহার বহিরঙ্গগত রূপ প্রাচীন বা অপ্রচলিত হইয়া পড়ে, ইহাকেই প্রাচীন সাহিত্য বা classics বলে; নতুবা সাহিত্য নিত্য, ইহা প্রাচীন হইবার কোন কারণ নাই, ইহার প্রাচীনত্ব কেবল ইহার বহিরঙ্গে ; আন্তর ধর্মে সাহিত্য কদাচ প্রাচীন হইতে পারে না;কিন্তু সমাজের উপর দিয়া মৌখিক প্রবহমাণ লোক-সাহিত্য চিরদিনই নূতন, ইহার বহিরঙ্গেও কোনদিক দিয়াই জীর্ণতা স্পর্শ করিতে পারে না। ইহার কারণ, যাহা চিরপরিবর্তনশীল, তাহা কখনও প্রাচীন হয় না,লোক-সাহিত্যও তাহাই।
[গ্রন্থপঞ্জি : বাংলার লোকসাহিত্য: খন্ড-১, আশুতোষ ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা নং: ২৩-২৮]
emperor casino - Shootercasino
ReplyDelete› casino 제왕 카지노 › casino 1xbet korean Visit the Emperor Casino and you'll find over 200 slot machines and plenty of games for you to indulge in. Check out our online casino review to kadangpintar learn about it!